স্বদেশ ডেস্ক:
উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ‘একাদশ’ শ্রেণিতে একটি এবং ‘দ্বাদশ’ শ্রেণিতে একটি; অর্থাৎ দুই বছর দুটি পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী। একাদশ শ্রেণির প্রথম পাবলিক পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হবে ২০২৬ সালে। পরের বছর ২০২৭ সালে অনুষ্ঠিত হবে ‘দ্বাদশ’ শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষা। কারিকুলাম প্রণয়ন কমিটির সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বিদ্যমান কারিকুলাম অনুযায়ী, একাদশ শ্রেণিতে বার্ষিক সমাপনী পরীক্ষা হয়। পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে পরে এক বছর দ্বাদশ শ্রেণি পাঠ গ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা। বছর শেষে অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচনী পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক
স্তরের চূড়ান্ত পরীক্ষা বোর্ডে অনুষ্ঠিত হয় পাবলিক পরীক্ষা হিসেবে। এই পরীক্ষায় দুই বছরের পাঠ্যক্রম অনুযায়ী তৈরি করা হয় প্রশ্নপত্র। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেয় শিক্ষার্থীরা।
নতুন কারিকুলামে স্তরভিত্তিক মূল্যায়ন কৌশল অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ‘একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যসূচির ওপর প্রতি বর্ষ শেষে একটি করে পরীক্ষা হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফলের সমন্বয়ে চূড়ান্ত ফল নির্ধারিত হবে।’ এ দুটি পরীক্ষা নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেবে নাকি বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে পাবলিক পরীক্ষা হিসেবে নেওয়া হবে? এর ব্যখ্যা দেওয়া হয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে।
এ বিষয়ে কারিকুলাম প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত একজন পদস্থ কর্মকর্তা গতকাল মঙ্গলবার আমাদের সময়কে নিশ্চিত করেন যে, একাদশ শ্রেণির বর্ষ শেষে একটি পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আবার দ্বাদশ শ্রেণির বর্ষ শেষে আরেকটি পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। দুই পরীক্ষার ফলের সমন্বয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে চূড়ান্ত ফল নির্ধারিত হবে।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, নতুন কারিকুলামে একাদশ শ্রেণিতে একজন শিক্ষার্থী যদি ছয়টি বিষয় পড়ে, এই ছয়টির পরীক্ষা প্রথম বছরই হবে। আবার দ্বিতীয় বছরে গিয়ে ওই শিক্ষার্থী যদি ছয়টি বিষয় পড়ে ওই বছর সে এই ছয়টি বিষয়ে বোর্ড পরীক্ষা দেবে। কিন্তু ফল তৈরি হবে দুই বছরের ফলের সমন্বয়ে। বিদ্যমান কারিকুলামে যেমন বিষয়ভিত্তিক ১ম পত্র, ২য় পত্র হিসেবে পড়ানো হয়। নতুন কারিকুলামে এভাবে বিষয় বিন্যাস থাকবে না।
এ ছাড়া বিদ্যমান পদ্ধতিতে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর এখন একজন শিক্ষার্থী জুন থেকে জুন প্রথম বর্ষ, জুলাই থেকে জুলাই দ্বিতীয় বর্ষ শেষ করে পরের বছর গিয়ে এপ্রিলে সে বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নেয়। তখন দুই বছর আগে যেই বিষয় পড়ছে তার ওপরও পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। কিন্তু নতুন পদ্ধতির ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থী এক বছরের পাঠের ওপরই বোর্ড পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারবে। এতে করে পরীক্ষার্থীর পড়ার চাপ কমবে। আবার কমে যাবে পাবলিক পরীক্ষার বিষয়। এমনকি সময়ও অনেকটা কমে আসবে।
নতুন কারিকুলামে একাদশ ও দ্বাদশ পরীক্ষা যেভাবে হবে : একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে আবশ্যিক বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন ৩০ শতাংশ এবং সামষ্টিক মূল্যায়ন বা পরীক্ষা হবে ৭০ শতাংশ। পাবলিক পরীক্ষায় ৭০ শতাংশ পরীক্ষা দিতে হবে। ঐচ্ছিক বিষয়সমূহে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ।
এ ছাড়া নৈর্বাচনিক, বিশেষায়িত কাঠামো, প্রকল্পভিত্তিক, ধারণানুযায়ী সামষ্টিক মূল্যায়নের পাশাপাশি প্রকল্পভিত্তিক ও ব্যবহারিক এবং অন্যান্য উপায়ে শিখনকালীন মূল্যায়নের সুযোগ থাকবে। সেখানে যে বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্ট হয়, প্রকল্প হয় সেগুলোর মাধ্যমে হবে।
উচ্চ মাধ্যমিক স্তর থেকে হবে বিভাগ বিভাজন- সায়েন্স, আর্টস ও কমার্স।
নতুন কারিকুলামের খসড়া সোমবার অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। তিনি জানান, ধাপে ধাপে এই কারিকুলাম বাস্তবায়ন করতে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৩ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত।